মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর সত্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলে তাদের উদ্দেশ্যে দু’টি কথা
এখন পর্যন্ত যত নবী, রসূল, গওস, কুতুব ও আওলিয়া জগতে এসেছেন সমসাময়িক আলেম উলামা কেউই তাঁদের সত্যতার প্রমাণকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করে নি। তাদের চোখ ছিল ঠিকই কিন্তু আল্লাহ্ ভীতি না থাকায় তারা আল্লাহ্র নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করতে পারে নি। ফলে সমসাময়িক আলেম উলামা সব সময় একই কথা বলেছে। এর উল্লেখ করে স্বয়ং আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেন, ইয়া হাসরাতান আলাল ইবাদ মা ইয়াতিহিম মির রাসূলিন ইল্লা কানূ বিহি ইয়াসতাহযিউন অর্থাৎ এমন কোন রসূল আসেন নাই যাকে হাসি বিদ্রুপ ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্র বানানো হয় নি। আল্লাহ্ তা’লার প্রেরিত অন্যান্য মহাপুরুষদের মতই মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর সপক্ষে আল্লাহ্ তা’লা সব ধরণের নিদর্শন দেখিয়েছেন। আকাশও মির্যা সাহেবের সপক্ষে সত্যতার সাক্ষ্য দিয়েছে আর এ পৃথিবীও তাঁর সত্যতার সাক্ষ্য দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ্ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্টদের মানদ- অনুযায়ীও তিনি সত্য প্রমাণিত হন। হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন লক্ষণাবলী অনুযায়ীও তিনি সত্যবাদী প্রমাণিত হন। মির্যা সাহেব যে সত্য দাবীদার এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে কিন্তু যাদের হৃদয়ে আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা ও ভয় আছে কেবল তারাই তা দেখতে পারে। এখন সেসব প্রমাণের মাঝে মাত্র কয়েকটি উপস্থাপন করছি। সাধারণ পাঠকদের বলছি, আপনারা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে এসব সত্যতার প্রমাণ যাচাই করে দেখুন আর নিজেরাই বিচার করুন। পরকালে প্রত্যেককে নিজ নিজ হিসাব নিজেকেই দিতে হবে। আর যারা চোখ থাকতেও অন্ধ থাকবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, মান কানা ফি হাযিহী আ’মা ফাহুয়া ফিল আখেরাতে আ’মা ওয়া আযাল্লু সাবীলা। যারা এ দুনিয়াতে আত্মিক দিক থেকে অন্ধ হবে পরকালেও তারা অন্ধ হবে এবং সবচেয়ে বেশী পথহারা হবে। অতএব নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে এসব প্রমাণাদি যাচাই করে দেখুন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, ওয়া লাকাদ যাল্লা কাবলাহুম আকসারুল আওওয়ালীন ওয়া লাকাদ আরসালনা ফীহিম মুনযিরীন (সূরা সাফ্ফাত: ৭২,৭৩)। অর্থাৎ যখনই অধিকাংশ মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে তখনই আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে সতর্ককারী রসূল আবির্ভূত হয়েছেন। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) যে সময় আবির্ভূত হয়েছেন উম্মতের আলেম ও বুযুর্গগণ সে সময় সম্পর্কে সাক্ষি দিয়ে বলেছেন, মুসলমানদের মধ্য থেকে ঈমান একেবারেই উঠে গেছে এমনকি অনেক আল্লামা এ-ও বলেছেন মুসলমানরা ইহুদী ও হিন্দুদেরকেও হার মানিয়েছে। এছাড়াও উম্মতের বড় বড় বুযুর্গ ও মুজাদ্দেদগণ এ সময়কেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষের আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করে গিয়েছেন। ঠিক সেই সময়ই এ উম্মতের সংশোধনের জন্য হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-কে আল্লাহ্ তা’লা প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও ইমাম মাহদীরূপে আবির্ভূত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, যুগের চাহিদা থাকলেও মির্যা সাহেবই যে সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ এর প্রমাণ কী?
সত্যতার প্রমাণ-১
ইহুদীরা যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর সত্যতার প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন করত তখন আল্লাহ্ তা’লা সত্যতার প্রমাণ হিসেবে এক আল্লাহতে বিশ্বাসীদের একটি উত্তর দিয়েছিলেন। আর এ উত্তরটি সূরা আল হাককার ৪৫-৪৮ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত আছে। আল্লাহ্ তা’লা বলছেন, وَ لَوْ تَقَوَّلَ عَلَیۡنَا بَعْضَ الْاَقَاوِیۡلِ Ὸ لَاَخَذْنَا مِنْہُ بِالْیَمِیۡنِ Ὸ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْہُ الْوَتِیۡنَ Ὸ فَمَا مِنۡکُمۡ مِّنْ اَحَدٍ عَنْہُ حٰجِزِیۡنَ Ὸ আর সে যদি কোন কথাকে মিথ্যা বানিয়ে আমাদের প্রতি আরোপ করত তাহলে নিশ্চয় আমরা তাকে ডান হাতে ধরতাম এবং আমরা অবশ্যই তার জীবন শীরা কেটে দিতাম। তখন তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না। (সূরা আল হাক্কা: ৪৫-৪৮) আমরা যারা মুসলমান, আমরা জানি ও ঈমান রাখি, হযরত মুহাম্মদ(সা.) সত্যবাদী নবী ও রসূল ছিলেন। আমরা জানি তিনি(সা.) ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হবার দাবী করেন আর ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মহানবী(সা.) তাঁর প্রথম ওহী লাভ করার পর ২৩ বছর জীবন লাভ করেছিলেন। মুসলমান আলেমগণ এই মানদ-টিকে আহলে কিতাবদের সামনে মহানবী(সা.)Ñএর সত্যতার প্রমাণ হিসাবে উপস্থান করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। আল্লাহ্ তা’লা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, তোমাদের কেউ মিথ্যা দাবীদারকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’তের নির্ভরযোগ্য একটি গ্রন্থ শারাহ্ আকায়েদ নাসফীতে লেখা আছে, নবী ছাড়া অন্য কারো মাঝে এসব বৈশিষ্ট পাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহ্ তা’লার প্রতি মিথ্যা আরোপ করার পরও আল্লাহ্ তাকে ২৩ বছর ছাড় দিবেনÑ এটিও একেবারে অসম্ভব’ (মাবহাসুন নাবুওয়াত পৃষ্ঠা, ১০০)। এরপর তিনি মানদ- হিসেবে ২৩ বছর কেন নিলেন এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উক্ত শারাহ আকায়েদ নাসফীতে লিখেন, নিশ্চয় মহানবী(সা.) যখন আবির্ভূত হয়েছেন তখন তার বয়স ছিল ৪০ বছর আর যখন তিনি ইন্তেকাল করেছেন তখন তার বয়স ছিল ৬৩ বছর। (পৃষ্ঠা ৪৪৪) তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আল্লাহ্ তা’লা নির্ধারিত এই মানদ-ে চলুন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-কে যাচাই করে দেখি। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) ১৮৮০ সালের আগ থেকেই আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে শরীয়ত বিহীন ওহী ও ইলহাম প্রাপ্তির দাবী করেন। আর এ দাবী তিনি বারাহীনে আহমদীয়া পুস্তকে প্রকাশ করে দেন। আর সফল জীবন কাটিয়ে তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৯০৮ সনে। অর্থাৎ মির্যা সাহেব ইলহাম প্রাপ্তির দাবী করার পর ২৮ বছরেরও বেশী জীবন লাভ করেছেন। অতএব পবিত্র কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) তাঁর দাবীতে সত্য প্রমাণিত হন। অনেকে খোদার উপর খোদকারী করতে গিয়ে বলে ফেলেন, এমন তো অনেকেই করতে পারে এবং ২৩ বছর জীবন লাভ করতে পারে। যারা এমন কথা বলেন তাদেরকে বলছি, আল্লাহকে ভয় করুন। আমাদের আল্লাহ্ এখনও তেমনই ক্ষমতার অধিকারী যেমনটি তিনি মুহাম্মদ(সা.)-এর সময় ছিলেন। এমন বক্তব্য খোদার বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। এক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ শুনুন! পৃথিবীতে এমন কোন মিথ্যা দাবীদার দেখাতে পারবেন না যে আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা ওহী ও ইলহাম আরোপ করে আল্লাহ্ নির্ধারিত ২৩ বছর জীবন পেয়েছে। নবুয়্যতের মিথ্যা দাবীদার অনেকেই গত হয়েছেন, যেকোন একটি উদাহরণ দেখান যে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম লাভের মিথ্যা দাবী করেও ২৩ বছর জীবন পেয়েছে। অসম্ভব, কখনও এমনটি হতে পারে না। কেননা আল্লাহ্ তা’লা যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ তা’লার প্রতি মিথ্যারোপকারীকে আল্লাহ্ নিজে ধ্বংস করে দেন।
অতএব হৃদয়ের চোখ উন্মুক্ত করে দেখুন এই আয়াত কীভাবে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর সপক্ষে সত্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।
অাপানাদের সম্পর্কে অারো জানতে চাই। সংক্ষিপ্ত লেখাটি পড়ে ভাল লাগল।
ReplyDeleteসূরা হাক্কার আয়াতগুলো ঠিক আছে কিন্তু বিন্যাস ঠিক করতে হবে।
ধন্যবা্দ।