Monday, May 14, 2018

আপত্তি : আমার আলামত দশ লক্ষ। (রুহানী খাযায়েন ২১/৭২) রসূলুল্লাহ্(সা.)-এর মু’জিযা তিন হাজার। (রুহানী খাযায়েন ১৭/১৫৩)

উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর দাসত্বে আল্লাহ্ তা’লার নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসাবে দাবি করেছেন। আর আল্লাহ্কে এ যুগে লাভ করার একমাত্র পথ হিসেবে মহানবী(সা.)-এর পূর্ণ অনুসরণ ও অনুগমনকে তিনি বার বার তাঁর পুস্তকাদিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এ বক্তব্য সূরা আলে ইমরানের আয়াতের সাথে হুবহু মিল খায়। সূরা আলে ইমরানের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّـهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّـهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّـهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ তুমি বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহ্র ভালোবাসা চাও তাহলে আমার অনুকরণ অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। অতএব, মুহাম্মদ(সা.)-এর পর আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের একমাত্র পথ হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর আনুগত্য। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর দ্যার্থহীন বক্তব্য শুনুন,

আপত্তি: মুহাম্মদী বেগম এবং মির্যা আহমদ বেগ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয় নি।

আপত্তিকারীরা দু’টি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করে আপত্তি করে থাকেন। এই দু’টি ভবিষ্যদ্বাণী পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একটি ভবিষ্যদ্বাণী সম্বলিত ইলহাম হল, بکر و ثیبবিকরুন ওয়া সাইয়্যেবুন। মির্যা সাহেব এর উল্লেখ করে নিজে বলেছেন, তার সাথে একজন কুমারী নারীর বিয়ে হবে এবং পরে আরেকজন বিধবা নারীর সাথে বিয়ে হবে। আর অপর ইলহামটি হল, মুহাম্মদী বেগমের সাথে বিয়ে সংক্রান্ত। তার মূল আপত্তি হল, মির্যা সাহেব নিজে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তার সাথে এক বিধবা নারীর তথা মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীটি বাস্তবায়িত হয় নি। উত্তর: মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) এক যুগ পর্যন্ত এমনটিই বুঝেছিলেন একথা সত্য। মির্যা সাহেব প্রাথমিক পর্যায়ে بکر و ثیب ‘বিকরুন ওয়া সাইয়্যেবুন’ ইলহাম অনুযায়ী মনে করতেন, তাঁর সংসারে একজন কুমারী তাঁর স্ত্রী হয়ে এসেছেন অর্থাৎ হযরত নুসরত জাহান বেগম(রা.) এবং আরেক জন বিধবা তাঁর স্ত্রী হয়ে আসবেন অর্থাৎ ভবিষ্যদ্বাণীর শর্ত পূরণ হলে মুহাম্মদী বেগম স্ত্রী হয়ে তাঁর ঘরে আসবেন। উভয় ভবিষ্যদ্বাণী কাছাকাছি সময়ে প্রাপ্ত হওয়ায় মির্যা সাহেব উপরোক্ত ব্যাখ্যাই সকলকে অবগত করেছেন।بکر و ثیب ‘বিকরুন ওয়া সাইয়েবুন’-এর অর্থ নিরূপন করার জন্য মুহাম্মদী বেগমের ভবিষ্যদ্বাণীটির সত্যাসত্য জানা আবশ্যক। এই দু’টি ভবিষ্যদ্বাণী যাচাই করতে গিয়ে সর্বপ্রথম মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) রচিত গ্রন্থে মুহাম্মদী বেগম সংক্রান্ত যে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে তা তুলে ধরছি।

আপত্তি: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) রূহানী খাযায়েন ১৮শ খণ্ডে ২২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘আল্লাহ্ আমার হাতে বয়াত গ্রহণ করেছেন’।

উত্তর: এমন কোন দাবিই মির্যা সাহেব করেন নি! ডাহা মিথ্যাকথা। আল্লাহ মিথ্যাবাদীর প্রতি লানত করুন। প্রিয় পাঠক, রূহানী খাযায়েন ১৮শ খণ্ডের ২২৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হযরত মির্যা গোলাম আহমদ(আ.) তাঁর কয়েকটি আরবী ইলহাম প্রকাশ করেছেন। খোদার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এসব ইলহামের মাঝে একটি বাক্য হল, ‘ইন্নি বায়া’তুকা বায়া’নী রাব্বী’। এ থেকে আপত্তিকারী যে বিকৃত অর্থ বের করেছেন তা মোটেও ধোপে টেকে না। কেননা,

আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন “স্বপ্নে দেখলাম, আমি খোদা এবং বিশ্বাস করলাম আসলেই তাই। (রুহানী খাযায়েন ৫/৫৬৪)” অর্থাৎ মির্যা সাহেব আল্লাহর অবমাননা করেছেন, নাউযুবিল্লাহ।

উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) রচিত ‘আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম’ গ্রন্থের ৫৬৪ নম্বর পৃষ্ঠার আরবী অংশে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) একটি স্বপ্নের উল্লেখ করেছেন। চলুন, প্রথমে তাঁর লেখা আরবী অংশের অনুবাদটি দেখে নেয়া যাক।
তিনি (আ.) বলেন, আমি স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহ্ হিসাবে দেখেছি এবং দৃঢ় প্রত্যয় জন্মাল আমিই তিনি। আর আমার নিজস্ব কোন ইচ্ছা, চিন্তা বা আচরণ অবশিষ্ট থাকল না, আর আমি  কানায় কানায় পরিপূর্ণ একটি পাত্রের মত হয়ে গেলাম বরং এমন একটি বস্তুর মত হয়ে গেলাম যাকে আরেক সত্তা বগলদাবা করে এমনভাবে নিজের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছে যার ফলে তার নিজস্ব কোন অস্তিত্ব বা গন্ধ বলে কিছুই রইল না আর সে তাঁর মাঝে বিলিন হয়ে গেল...’ 
‘...আর আমার আল্লাহ্-রূপে নিজেকে দেখার অর্থ হচ্ছে কায়ার দিকে ছায়ার প্রত্যাবর্তন। খোদা-প্রেমিকদের সাথে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হল, আল্লাহ যখন কোন মঙ্গল সাধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তখন যেভাবে তাঁর ইচ্ছা পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা চায়, সেভাবে তা পূর্ণ করার লক্ষে আমাকে তাঁর উদ্দেশ্য ও একত্ববাদের বিকাশস্থলে পরিণত করেন। সৎকর্মশীল, কুতুব ও সিদ্দীকদের সাথে তিনি এ ধরনেরই আচরণ করে থাকেন।’ 
হযরত মির্যা সাহেব শেষে গিয়ে বলছেন, “এই ঘটনার মাধ্যমে আমি ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ’ (সর্বেশ্বরবাদ) মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণাকে বুঝাই না আবার এর মাধ্যমে আমি ‘হুলুলিয়্যিন’ (অর্থাৎ আক্ষরিকভাবে খোদা কারো মাঝে প্রবিষ্ট হয়ে যান এমন) মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণাকেও বুঝাচ্ছি না বরং এ ঘটনাটি ঠিক তেমনই যেমনটি মহানবী(সা.)-এর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নফল ইবাদতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বুখারী শরীফে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে-সে কথাই বুঝিয়েছি।” 
পাঠকবৃন্দ, এ পুরো বিষয়টি হযরত মির্যা সাহেবের স্বপ্নে দেখা একটি দৃশ্য। হযরত মির্যা সাহেব তার দেখা স্বপ্ন তুলে ধরেছেন এবং এর পাশাপাশি

Wednesday, May 9, 2018

আপত্তি : যিল্লি (ছায়া) নবুওয়াত মসীহ মওউদের (মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) পা-কে পিছনে সরায়নি। বরং সামনে বাড়িয়েছে এবং এত সামনে বাড়িয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাঁধ বরাবর এনে দাঁড় করিয়েছে। (কালিমাতুল ফসল ১১৩)

উত্তর: আপত্তিকারী হযরত মসীহে মওউদ(আ.) বা তাঁর খলীফাদের বক্তব্য বা লেখায় আপত্তি করার মত কিছু না পেয়ে শেষে এমন সব পুস্তক বা রচনা থেকে আপত্তি উত্থাপন করছেন যেগুলো আমাদের জন্য হুজ্জত নয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের নীতিগত কথা হল, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর লিখিত রচনা ও পুস্তকাবলী আমাদের জন্য হুজ্জত এবং তার পরে তাঁর খলীফাগণের রচনাবলি বা তাদের বক্তব্য আমাদের জন্য হুজ্জত। এর বাইরে কে কী মন্তব্য করেছে আর কি বলেছে তার উত্তর দিতে আমরা বাধ্য নই। কেননা, সেগুলো তাদের ব্যক্তিগত অভিমত ও বিশ্লেষণ হিসাবে গণ্য হতে পারে। আহমদীয়া জামা’তের বক্তব্য সেটাই যেটা হযরত মসীহে মাওউদ(আ.) বা তাঁর কোন খলীফা বর্ণনা করেছেন। 

বাকি রইল উদ্ধৃত বক্তব্যের তাৎপর্য- এ কথা

আপত্তি : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি। (রূহানী খাযায়েন ১৭/২৬৩, দ্র. টিকা)।

উত্তর: যেভাবে আপত্তিকারী লিখেছেন হযরত মির্যা সাহেব সেভাবে বিষয়টিকে বলেন নি। তিনি লিখেছেন, “যেহেতু মহানবী(সা.)-এর প্রতি অর্পিত দ্বিতীয় আবশ্যকীয় দায়িত্ব ছিল, হেদায়েতের প্রচার ও প্রসারের কাজকে পূর্ণতা দান করা কিন্তু মহানবী(সা.)-এর যুগে প্রচার মাধ্যম ও উপায়-উপকরণ না থাকায় এ কাজ বাস্তবায়ন অসম্ভব ছিল। এজন্যই পবিত্র কুরআনের আয়াত ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকূ বিহিম’-এর মাঝে হুযূর(সা.)-এর পুনরায় আগমনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যেন তাঁর প্রতি অর্পিত দ্বিতীয় আবশ্যকীয় দায়িত্ব অর্থাৎ হেদায়েতের পূর্ণ প্রচার ও প্রসারের কাজ সম্পন্ন হয় যা তাঁর হাতেই সম্পন্ন হবার কথা ছিল। প্রাথমিক যুগে উপায়-উপকরণ না থাকায় এটি সম্পন্ন হয় নি। অতএব, এই গুরুদায়িত্বকে মহানবী(সা.) তাঁর বুরুযী তথা রূপক আগমনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন আর এমন এক যুগে এসে তা সম্পন্ন করেছেন যখন বিশ্বের সকল জাতিতে ইসলামের বাণী পৌঁছানোর উপায়-উপকরণ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল।” (রূহানী খাযায়েন, ১৭শ খ-, পৃষ্ঠা ২৬৩, পাদটিকা দ্রষ্টব্য) 

এ বক্তব্য পাঠ করে ভাল করে বুঝতে পারছেন, এতে হযরত মির্যা সাহেব রসূল(সা.)-কে খাটো করেন নি বরং তাঁর(সা.) বুরুযী আগমনের মাধ্যমে রসূলুল্লাহরই আধ্যাত্মিক বিকাশ হিসাবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। অথচ আপত্তিকারী বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন মির্যা সাহেব মহানবী(সা.)-এর বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। মুহাম্মদ(সা.) হলেন শরীয়তবাহক শেষ নবী, পূর্ণাঙ্গীন নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর মাধ্যমে শরীয়ত পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এবং খোদার পক্ষ থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ করা হয়েছে। হযরত মির্যা সাহেব তাঁর অনুসারী হয়ে তাঁর দাসত্বে সেই শরিয়তের বাণী ও শিক্ষাকে জগৎময় ছড়িয়ে দেয়ার ও প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি মালিক ও কামলার ন্যায়। মহানবী(সা.) হলেন মালিক। আর একজন কামলা তার মালিকের সম্পদ কাঁধে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। আপত্তিকারী তাঁর দাবি সম্পর্কে জানেন কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব বক্তব্য খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে জনগণের মাঝে দূরভিসন্ধিমূলকভাবে ছড়াচ্ছেন।

Tuesday, May 8, 2018

আপত্তি : মির্যা সাহেব বিরূদ্ধবাদীদের গালি গালাজ করেছেন ।

উত্তর : হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই শত্রুদের পক্ষ থেকে অপবাদ আরোপ করা হয় তিনি নাকি তার বিরুদ্ধবাদিদেরকে জঘন্য গালাগালি করেছেন। এরপর তারা একটি লম্বা তালিকা তুলে ধরে এর মাধ্যমে জনগণকে উসকানি দিয়ে থাকে। আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পক্ষ থেকে যতবার এসব জঘন্য মিথ্যা অপবাদের যৌক্তিক উত্তর প্রদান করা হয় ততবারই তারা সেই সমস্ত যুক্তি এড়িয়ে গিয়ে আক্ষরিক ও শাব্দিক অর্থে সেই শব্দগুলোকে নিজেদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে থাকে। এ স্থলে আমরা সচেতন পাঠকের কাছে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে এর উত্তর তুলে ধরছি যাতে সমাজে গোলযোগ ও ফিতনা সৃষ্টিকারীদের মুলোৎপাটিত হয়। 
কঠোর-বাক্য ব্যবহার সম্পর্কে মির্যা সাহেব স্পষ্ট ভাষায় বলেন, 
‘গালিগালাজ এক জিনিস আর প্রকৃত ঘটনার বিবরণÑ তা যতই অপ্রিয় ও তিক্তই হোক না কেন, আরেক জিনিস। প্রত্যেক সত্যবাদী ও সত্য বর্ণনাকারীর আবশ্যক দায়িত্ব হল, সত্য বক্তব্যকে প্রত্যেক উদাসীন বিরুদ্ধবাদীর কর্ণগোচর করানো। সেই বিরুদ্ধবাদী সত্য কথা শুনে অসন্তুষ্ট হলে হোক’ (রূহানী খাযায়েন খ--৩, ইযালায়ে আওহাম: পৃষ্ঠা ২০)। 
এ ধরনের উদাহরণ তথা সত্যের বর্ণনা পবিত্র কুরআনেও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কুরুচীপূর্ণ মানুষ সেগুলোকে বক্র দৃষ্টিতে দেখে আর খোদাভীরুরা এসব বক্তব্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যের প্রকাশ দেখে ঈমানে আরও বলিয়ান হয়ে নিজেদের দোষত্রুটি দূর করতে এবং প্রকৃত মুসলমান হতে চেষ্টা করে। 
কুরআন শরীফ পবিত্র গ্রন্থ এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। এই পবিত্র কুরআনের সূরা বাইয়্যেনার ৭ নম্বর আয়াতে কাফেরদের বিষয়ে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, أُولَـٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ     অর্থাৎ ‘এরাই নিকৃষ্টতম জীব’। পাঠকবৃন্দ, ভাল করে চিন্তা করে দেখুন ‘র্শারুল বারিয়্যা’ অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, সব সৃষ্ট জীবের মাঝে নিকৃষ্টতম। ‘নিকৃষ্টতম জীব’ বলে যত নিকৃষ্ট ও নোংরা জীব-জন্তু ও নোংরা মানুষ রয়েছে তাদেরকে এর অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাহলে কাফেরদেরকে কোন ভাষায় মূল্যায়ণ করা হয়েছে, একবার ভেবে দেখুন? মহানবী(সা.) মিশকাত শরীফের একটি বিখ্যাত হাদীসে শেষ যুগের লক্ষণাবলী উল্লেখ করার পর সে যুগের আলেম-উলামাদের সম্পর্কে বলেছেন, 
علماؤهم شر من تحت أديم السماء من عندهم تخرج الفتنة وفيهم تعود
তাদের আলেমগণ আকাশের নি¤œস্থ সকল সৃষ্টজীবের মধ্যে নিকৃষ্টতম জীব হবে। তাদের মধ্য থেকে নৈরাজ্যের  সৃষ্টি হবে এবং তাদের মাঝেই তা ফিরে যাবে।” (মিশকাত, কিতাবুল ইলম)।
এই হাদীসে ‘র্শারুম মান তাহ্তা আদীমিস সামা’ বলার পর পৃথিবীর বুকের কোন নোংরা জীব বা নিকৃষ্ট মানুষ এর আওতা বহির্ভূত থাকে কি? এই পরিচ্ছদে মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে লেখকের প্রধান আপত্তি হল, মির্যা সাহেব শেষ যুগের আলেম-উলামাদের গালি দিয়েছেন। পাঠকবৃন্দ, মির্যা সাহেব নিজের থেকে কোন গালি দেন নি বরং আমাদের প্রিয় রসূল(সা.) শেষ যুগের আলেম-উলামাদের সম্পর্কে যা বলে গেছেন তারই ভাবানুবাদ করেছেন মাত্র। একইভাবে মহানবী(সা.)-এর একটি প্রসিদ্ধ হাদীস কন্যুল উম্মালে বর্ণিত আছে, 
تكون في أمتي قزعة فيصير الناس إلى علمائهم فإذا هم قردة وخنازير
অর্থাৎ ‘আমার উম্মতে হঠাৎ বিরাট অস্থিরতা দেখা দিবে। মানুষ তখন তাদের আলেমদের শরণাপন্ন হবে কিন্তু তারা গিয়ে হঠাৎ দেখতে পাবে তারা শুকর ও বানরে পরিণত হয়েছে’। (কনযুল উম্মাল: ১৪শ খ-, হাদীস নম্বর-৩৮৭২৭)  
এটি মহানবী(সা.)-এর বাণী। এ হাদীসের যত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণই করা হোক, শব্দগুলো কিন্তু স্পষ্ট। অতএব, যে অর্থে যে কথা কুরআনে বলা আছে আর যে কথা রসূলে আকরাম(সা.) বলে গেছেন সে কথাই হযরত মির্যা সাহেব যথাস্থানে সেগুলোর অনুবাদ করে দিয়েছেন মাত্র। 
প্রত্যেক খোদাভীরু আলেমের দায়িত্ব সে যেন নিজের দিকে তাকিয়ে ইস্তেগফার করে যাতে সে রসূল(সা.)-এর এই সাবধান বাণীর আওতাভুক্ত না হয়। 
আপত্তি করা হয়, মির্যা সাহেব ‘যুররিয়াতুল বাগায়া’ তথা ‘বেশ্যার সন্তান’ অর্থে মুসলমানদেরকে গালি দিয়েছেন। 
প্রতিশ্রুত মসীহ্(আ.) যদি সত্যিই আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম গ্রন্থে মুসলমানদেরকে এই অর্থেই এমন গালি দিয়ে থাকেন তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি জঘন্য কাজ করেছেন এবং মুসলমানদের এতে ক্ষিপ্ত হবারই কথা।
কিন্তু যদি বিষয়টি এর উল্টো দাঁড়ায় তাহলে বুঝতে হবে বিরুদ্ধবাদীরা মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। প্রত্যেক শব্দের অনুবাদ তার পূর্বাপর ও বিষয়বস্তুর আলোকে করতে হয়। যেখানে শাব্দিক অর্থে বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় সেখানে তার গভীর তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ গ্রহণ করতে হয়। যেমন,‘ওয়া’তাসিমূ বিহাবলিল্লাহে জামীআ’। তোমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আল্লাহ্র রজ্জুকে আঁকড়ে ধর। এখানে আল্লাহ্র রশি হিসাবে বাহ্যিক অর্থ করা সম্ভবই নয়। আল্লাহর রশি হিসেবে যদি আকাশ থেকে বাহ্যিক কোন দড়ি ঝুলানোও হয় আর একসাথে সব মুসলমান সেটিকে আঁকড়ে ধরতে চায় তাহলেও দশ বিশ জনের বেশি কেউ তা ধরতে পারবে না। অতএব, এর তাৎপর্যপূর্ণ গভীর অর্থ অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। আর তা হল, আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রেরিত আল-কুরআনকে বা মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ(সা.)-কে অথবা যুগ-ইমামকে সবাই আঁকড়ে ধর। এছাড়া এর বাহ্যিক কোন অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়। তেমনিভাবে সূরা বাকারার একেবারে প্রারম্ভেই সত্য অস্বীকারকারীদের ‘সুম্মুন বুকমুন উময়ুন’ বলা হয়েছে- এতে বাহ্যিকভাবে তাদেরকে বোবা, বধির বা অন্ধ বুঝানো হয় নি বরং আত্মিকভাবে বোবা, বোধির বা অন্ধ বলা হয়েছে। আমরা কেন এটিকে আত্মিকভাবে নিয়েছি? কেননা, পূর্বাপর আমাদেরকে এর বাইরে যাবার অনুমতি দেয় না। 
ঠিক একইভাবে, মির্যা সাহেব মুসলমানদের ‘বেশ্যার বংশধর’ বলে গালি দেন নি। ‘আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম’ পুস্তক ১৮৯৩ সালের লেখা। এই বইতে তাঁর অস্বীকারকারী মুসলমানদের বেশ্যার বংশধর বলার প্রশ্নই ওঠে না। 
‘আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম’ গ্রন্থে হযরত মির্যা সাহেব রাণী ভিক্টোরিয়াকে মুসলমান হবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন মুসলমানদের মনোস্তুষ্টি করতে। তাহলে, কীভাবে সেই একই গ্রন্থে মুসলমানদেরকে তিনি জঘন্য ভাষায় গালি দিতে পারেন?
জানা আবশ্যক, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ(আ.) উক্ত বইয়ের আলোচ্য অংশে নিজের ইসলাম সেবার কথা তুলে ধরে বলেছেন: “আমার বয়স যখন ২০, তখন থেকেই আর্য সমাজীদের ও খ্রিষ্টানদের সাথে যুক্তিতর্কের মোকাবিলা করার ইচ্ছা আমার মনে সৃষ্টি হল। তদনুযায়ী আমি ‘বারাহীনে আহমদীয়া,’ ‘সুরমা চাশমায়ে আরিয়া’, ‘ইযালায়ে আওহাম’ এবং ‘দাফেউল ওয়াসাওয়েস’ প্রভৃতি পুস্তক রচনা করি। এগুলো ইসলামের সমর্থনে লেখা। প্রত্যেক মুসলমান এই বইগুলোকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার দৃষ্টিতে দেখে এবং এগুলোতে পরিবেশিত তত্ত্ব ও তথ্য দ্বারা উপকৃত হয় এবং তারা আমার ইসলামের দিকে আহ্বান করাকে সমর্থন দেয়। ‘ইল্লা যুররিয়াতুল বাগায়া আল্লাযীনা খাতামাল্লাহু আলা কুলুবিহিম ফাহুম লা ইয়াকবালূন’। ‘যুররিয়াতুল বাগায়া’ ছাড়া অর্থাৎ যাদের অন্তরে আল্লাহ্ মোহর মেরে দিয়েছেন, তারা ঈমান গ্রহণ করবে না (রুহানী খাযায়েন, ৫ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৪৮)। এখানে মির্যা সাহেব ‘যুররিয়াতুল বাগায়া’ অর্থ কি তা স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন। এরা হল তারা যাদের হৃদয়ে আল্লাহ্ মোহর  মেরে দিয়েছেন। 
হযরত মির্যা সাহেব যখন ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ (ইসলাম ধর্মের পক্ষে দলিল-প্রমাণ সংবলিত) ও ‘সুরমা চশমায়ে আরিয়া’ (আর্য সমাজীদের অসারতা প্রমাণকল্পে) বই লিখলেন তখন আর্য সমাজীদের নেতা পেশাওয়ার নিবাসী প-িত লেখরাম উক্ত পুস্তিকাদ্বয়ের বিরুদ্ধে ‘খাবতে আহমদীয়া’ এবং ‘তাকযীবে বারাহীনে আহমদীয়া’ বই রচনা করে। এর প্রত্যুত্তরে দলমত নির্বিশেষে মুসলমানরা মির্যা সাহেবের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। মৌলবী মোহাম্মদ হোসেন বাটালভী হযরত মির্যা সাহেব লিখিত ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ পুস্তকের সমর্থনে একটি রিভিউ প্রকাশ করেন। একইভাবে লাহোরের মুসলিম বুক ডিপো নিজ খরচে মির্যা সাহেবের লেখা ‘সুরমা চশমায়ে আরিয়া’ বইটি পুনর্মুদ্রণ করে। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, যার বিরুদ্ধে গাল দেয়ার অভিযোগ তিনি তার একই বইতে মুসলমানদেরকে রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্য দোয়া করতে বলেছেন যেন রাণী মুসলমান হয়ে যান (রুহানী খাযায়েন: ৫ম খ-, পৃষ্ঠা ৫২৬-৫২৭ পৃ) আবার ৫৩৫ পৃষ্ঠায় রাণীকে বলেছেন যে, হে রাণী ভিক্টোরিয়া! আপনি জেনে রাখুন, মুসলমানরা আপনার বিশ্বস্ত প্রজা। তাই আপনি তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিবেন এবং তাদের মনোস্তুষ্টির ব্যবস্থা করবেন।’ বইয়ের ৫৪০ পৃষ্ঠায় নেক উলামাদের প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘সমস্ত প্রশংসা সেই মহান অস্তিত্বের- যিনি আধ্যাত্মিক আলেমদের এবং মোহাদ্দেসীনদের নবীদের উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন এবং তাদের উত্তম তরবিয়ত করেছেন। যিনি রাণীকে মুসলমান হবার আহ্বান জানাচ্ছেন, যিনি মুসলমানদের মনোস্তুষ্টি করতে রাণীকে আহবান জানাচ্ছেন, যিনি আধ্যাত্মিক উলামাদের এত প্রশংসা করেছেন তিনি হঠাৎ তাদের এত জঘন্য ভাষায় গালি দিবেনÑ তা কেমন করে সম্ভব? যে ব্যক্তি হযরত মির্যা সাহেবের লেখা ‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম’ বইটি মনোযোগ সহকারে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পড়েছে সে এ জাতীয় কথা বলতেই পারে না। 
এছাড়াও ‘যুররিয়াতুল বাগায়া’-র অনুবাদ ‘বেশ্যার বংশধর’ করা ঠিক নয়। কেননা মির্যা সাহেব তথা লেখক নিজেই এ শব্দের অর্থ ‘বিদ্রোহী মানুষ’ করেছেন। মৌলবী সা’দুল্লাহ লুধিয়ানীকে ‘আঞ্জামে আথম’ পুস্তকে তিনি ‘ইবনু বাগা’ বলে সম্বোধন করেন এবং নিজেই এর অনুবাদ করেন: ‘হে বিদ্রোহী মানুষ’ (আল-হাকাম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৭ সন)।
অতএব ‘যুররিয়াতুল বাগায়ার’ অর্থ হল বিদ্রোহীদের সন্তান। বলা বাহুল্য, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আদিষ্ট মহাপুরুষকে যারা অমান্য বা অবজ্ঞা করে তারা অবাধ্য ও বিদ্রোহী। এ বিষয়টিই তিনি আরবীতে উপস্থাপন করেছেন। প্রবাদ-প্রবচনে শাব্দিক অর্থ কখনও গ্রহণ করা হয় না বরং এর অন্তর্নিহিত একটি অর্থ থাকে। একথা সব ভাষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আরবী জানা সব আলেমও এটি ভালভাবে জানেন। যেমন ‘ইবনুস সাবীল’ বলতে রাস্তার ঔরসজাত সন্তান বুঝান হয় না বরং এ শব্দকে ‘পথিক’ বা ‘মুসাফির’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়। কেবল উন্মাদই ‘ইবনুস সাবীল’-এর অর্থ ‘পথিক’ না করে ‘পথের ঔরসজাত সন্তান’ করবে। তাই এমন ব্যক্তি যে নিজেকে নিজে গালি দেয়ার শখ রাখে সে ছাড়া অন্য কেউ ‘যুররিয়াতুল বাগায়া’-র বিকৃত কোন অর্থ করবে না। আর লেখক যখন নিজের বক্তব্যে ব্যবহৃত কোন শব্দের অর্থ নিজেই করে দেন তখন কারও এতে অর্থ বিকৃতির অধিকার থাকে না। এর পরও যদি কেউ এর অর্থ ‘বেশ্যার বংশধর’ করেন তবে এটি অযথা নিজেকে নিজেই গাল দেয়ার মতো ব্যাপার হবে। মির্যা সাহেব এর জন্য দায়ী নন। 

আপত্তি: মির্যা সাহেব মৌলভী সা’দুল্লাহকে ‘হিন্দুর বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছেন। 
পাঠকবৃন্দের জানা থাকা দরকার, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) মৌলভী সা’দুল্লাহ্ সম্পর্কে ‘হিন্দুযাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে ‘হিন্দুর ছেলে’। প্রকৃতপক্ষেই মৌলভী সা’দুল্লাহ লুধিয়ানী হিন্দু থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মৌলভী সা’দুল্øাহ্র পিতা হিন্দু ছিলেন। এখানে মির্যা সাহেব তার পিতৃপরিচয় তুলে ধরেছেন। কিন্তু এর অনুবাদ করতে গিয়ে আপত্তিকারী হিন্দুর ছেলে না বলে ‘হিন্দুর বাচ্চা’ বলে বিকৃতকরে একে গালিররূপ দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন। 
আপত্তিকারী যদি এরপরও এসবকে কুরুচিপূর্ণ জঘন্য গালি বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাহলে তার জন্য একটি শিক্ষনীয় ঘটনা তুলে ধরছি।
নিশ্চয় তিনি জানেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে সুহায়লের আগে মক্কার যে সব বড় বড় কাফের সর্দার হুদায়বিয়ার প্রান্তরে এসে চুক্তি করতে উদ্যত হয় তাদের মাঝে একজন ছিল উরওয়া। উরওয়া তার আলোচনার এক পর্যায়ে সাহাবীদের ঈমান এবং তাদের দৃঢ়তা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে বাজে মন্তব্য করে। তার এ কথায় পরোক্ষভাবে রসূলে করীম(সা.)-এর অবমাননাই নিহীত ছিল। তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক(রা.) সহ্য করতে না পেরে রসূলে করীম (সা.)-এর উপস্থিতিতে বলেছিলেন, 
فَقَالَ لَهُ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ امْصُصْ بِبَظْرِ اللَّاتِ أَنَحْنُ نَفِرُّ عَنْهُ وَنَدَعُهُ
অর্থাৎ তখন আবু বকর(রা.) তাকে বললেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাবো? (বুখারী কিতাবুশ শুরুত; ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত হাদীস নম্বর ২৫৪৭) 
এটা কি হযরত আবু বকর সিদ্দিক(রা.)-এর অশালীন চরিত্রের রূপ ছিল নাকি রসূলে করীম(সা.)-এর সম্মান রক্ষার্থে এবং তাঁর অপমানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছিল? যে অর্থে হযরত আবু বকর(রা.) কড়া জবাব দিয়েছেন সেই একই অর্থে হযরত মির্যা সাহেবের বক্তব্যও প্রযোজ্য হতে পারে।
আমরা আশা করি, হযরত আবু বকর(রা.) এর পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক উচ্চ মর্যাদা বিষয়ে আপত্তিকারীর ও দেওবন্দীদের কোন সংশয় নেই। আমরা আশা করি, দেওবন্দী আলেম হিসাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর এই বক্তব্যটি আক্ষরিক অর্থে গালিগালাজ হিসাবে তারা নিবেন না বরং তাঁর আত্মাভিমান লক্ষ্য করে রসূলের সম্মান রক্ষাকারী হিসাবেই তাঁকে বিবেচনা করবেন। 
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) কী কারণে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছিলেন তা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন,
“বিরুদ্ধবাদীদের সাথে লিখিত তর্কযুদ্ধের সময় আমার পক্ষ থেকে কিছুটা কঠোর বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু কঠোর বাক্য ব্যবহারের সূচনা আমার পক্ষ থেকে হয় নি বরং এসব বক্তব্য চরম নোংরা আক্রমণের জবাবে লেখা হয়েছিল। বিরুদ্ধবাদীদের কথা এতই কঠোর ও নোংরা ছিল যার ফলে এর বিপরীতে এতটুকু কঠোর বাক্যের প্রয়োজন ছিল। একথার প্রমাণ হিসাবে আমি আমার পুস্তকাদির কঠোর বাক্য এবং বিরুদ্ধবাদীদের কঠোর বাক্য পাশাপাশি ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ পুস্তকে তুলে ধরেছি। সেই সাথে এটিও মনে রাখতে হবে, আমি এসব বাক্য প্রত্যুত্তরে ব্যবহার করেছি। কঠোর বাক্যের সূচনা বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে হয়েছিল। আমি চাইলে এসব নোংরা ভাষা শুনেও ধৈর্য ধারণ করতে পারতাম, কিন্তু দু’টি কারণে আমি তাদের উত্তর দেয়া সমীচীন মনে করেছি। প্রথমত, বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কঠোর ভাষার উত্তর কঠোর ভাষায় পেয়ে যেন নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে এবং ভবিষ্যতে যেন তারা শালীনতা বজায় রেখে আলোচনা করে। দ্বিতীয়ত, বিরুদ্ধবাদীদের চরম অবমাননাকর এবং উস্কানীমূলক এসব লেখার কারণে সাধারণ মুসলমানরা যেন উত্তেজিত হয়ে না যায় এবং কঠোরভাষার উত্তর কিছুটা কঠোর ভাষায় দেয়া হয়েছে দেখে যেন তারা নিজেদেরকে একথা ভেবে আশ্বস্ত করতে পারে, যাক কঠোর বাক্যের বিপরীতে কিছুটা হলেও কঠোর ভাষায় জবাব দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এভাবে যেন তারা বর্বরোচিত প্রতিশোধ গ্রহণ করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখে।” (কিতাবুল বারিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৩শ খ-, পৃষ্ঠা ১১ ও ১২)। 

আপত্তি : মির্যা সাহেব তার বিভিন্ন পুস্তকে ঈসা(আ.)-এর বিভিন্ন কবরের কথা উল্লেখ করেছেন, কোনটি সঠিক?


উত্তর: হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.) বলেন,
‘একথা সত্য, মসীহ তার দেশ গেলিলে গিয়ে মারা গেছেন।’ (ইযালায়ে আওহাম, রূহানী খাযায়েন ৩য় খ-, পৃষ্ঠা ৩৫৩)
আবার হযরত মসীহ্ মাওউদ(আ.) বলেছেন,
‘এরপর মসীহ সেই স্থান থেকে সংগোপনে পালিয়ে কাশ্মিরের দিকে এসে গেছেন এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেছেন আর তোমরা শুনেছ, শ্রীনগরের খানইয়ার মহল্লায় তাঁর কবর আছে।’ (কিশতিয়ে নূহ, রূহানী খাযায়েন ১৯শ খ- পৃষ্ঠা ৩৫৩)
যদি ইযালায়ে আওহাম পুস্তকে পূর্বাপর পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, হযরত মসীহ্ মাওউদ(আ.) এই উদ্ধৃতিতে খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের আলোকে হযরত মসীহ্ও তিন দিন জীবিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করছেন যে তিন দিন পর খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খোদার ডান পাশে গিয়ে বসেছেন।
হযরত মসীহ্ মাওউদ(আ.) ইযালায়ে আওহামে ‘২৩ এপ্রিল প্রকাশিত আখবার নূর আফশাঁর আপত্তি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। নূর আফসাঁ পত্রিকায় হযরত মসীহর আকাশে চলে যাবার দলীল দেয়া হয়েছিল, ১১জন হাওয়ারী স্বচক্ষে তাঁকে আকাশে চলে যেতে দেখেছে। এর প্রেক্ষিতে হযরত আকদাস মসীহ মাওউদ(আ.) লেখেন,
‘এখন পাদ্রি সাহেব শুধু একথাতেই সন্তুষ্ট হয়ে ভেবে নিয়েছেন যে, হযরত মসীহকে এই নশ্বর দেহ সহই তাঁর মৃত্যুর পর আকাশে দিকে উঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা জানে এই বর্ণনা লুকা কর্তৃক বর্ণিত যিনি হযরত মসীহকে দেখা তো দূরের কথা তার শাগরেদদের কাছ থেকেও কিছু শুনেন নি। এক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির বর্ণনা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে যেখানে কোন চাক্ষুষ সাক্ষির নাম উদ্ধৃত নেই। এসব বর্ণনা বিভিন্ন ভুল ধারণায় ভরপুর। এটা ঠিক, মসীহ নিজের দেশ গেলিলে মারা গেছেন কিন্তু যে দেহ দাফন করা হয়েছিল সেই দেহ নিয়েই তিনি জিবিত হয়ে গেছেন তা নয় বরং সেই অধ্যায়ের ৩ আয়াত স্পষ্ট করছে মৃত্যুর কাশফীভাবে ৪০দিন পর্যন্ত মসীহ তার শাগরেদদের দেখা দিয়েছেন। এস্থলে কেউ এটি মনে করবেন না, মসীহ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন কেননা আমি প্রমাণ করেছি, খোদা তালা মসীহর প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। বরং প্রথম অধ্যায়ের ৩ আয়াত মসীহর স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে সাক্ষ দিচ্ছে যা গালীলে সংঘটিত হয়েছে।... মনে রাখবে এসব বিশ্লেষণ এমন অবস্থায় যখন আমরা এসব উদ্ধৃতিকে সঠিক ও হস্তক্ষেপের উর্ধে মেনে নিই কিন্তু এসব উদ্ধৃতি মেনে নেয়া দুঃষ্কর বিষয়।”
(ইযালায়ে আওহাম; রূহানী খাযায়েন ৩য় খ-, পৃষ্ঠা ৩৫৩-৩৫৬)
 এই উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়, হযরত মির্যা সাহেব যে কবরকে গালীলে অবস্থিত বলে বর্ণনা করেছেন তা বাইবেলের আলোকে এবং খ্রিস্টানদের আকীদা থেকে বলেছেন যে কবরে হযরত মসীহ ক্রুশ বিদ্ধ হবার পর ছিলেন। এই কবরটি একটি কক্ষের ন্যায় ছিল খ্রিস্টানরা আজও এর উপাসনা করে।
হযরত মির্যা সাহেব উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে স্পষ্ট বলেছেন, ‘এস্থলে কেউ এটি মনে করবেন না, মসীহ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন কেননা আমি প্রমাণ করেছি, খোদা তালা মসীহর প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।’ এরপর তিনি শেষে বলছেন, ‘মনে রাখবে এসব বিশ্লেষণ এমন অবস্থায় যখন আমরা এসব উদ্ধৃতিকে সঠিক ও হস্তক্ষেপের উর্ধ্বে ধরে নিই কিন্তু এসব উদ্ধৃতি মেনে নেয়া দুঃষ্কর বিষয়।’ এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় হযরত মসীহ মাওউদ (আ.) গালীল বা বিলাদে শামের কবরকে জীবিত দাফনের কবরই বলেছেন। হযরত মির্যা সাহেব রূহানী খাযায়েন ১০ম খ-, সাত্ বচন পুস্তকের ৩০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেন, ‘হ্যা, আমি কোন এক পুস্তকে এটিও লেখেছিলাম, হযরত মসীহর কবর বিলাদে শামে কিন্তু এখন সঠিক গবেষণা আমাদেরকে এ বিষয়টি লিখতে বাধ্য করছে, প্রকৃত কবর কাশ্মীরেই আছে এবং বিলাদে শামের কবর হল যেখানে তাকে জীবিত দাফন করা হয়েছিল এবং তিনি তা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।”
অতএব, মির্যা সাহেব পূর্বে কোন পুস্তকে গালীল বা বিলাদে শামে মসীহর কবর আছে বলে বলে থাকলেও তার নিজের বক্তব্য অনুযায়ী কাশ্মীরের খানইয়ার মহল্লার কবরই প্রকৃত কবর আর গালীল বা বিলাদে শামের কবরটিতে হযরত মসীহ(আ.)-কে আহত অবস্থায় মৃত ভেবে দাফন করা হয়েছিল। অতএব স্পষ্ট করে বলে দেয়ার পর এতে আর কোন আপত্তি থাকতে পারে না। যে হেদায়েত অন্বেষণ করে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন। আমীন।

Saturday, May 5, 2018

আপত্তি: সত্য ধর্ম হলে মুরতাদ হয় কিভাবে? শামসুদ্দিন মুরতাদ ও মোল্লাদের উল্লাস।

আপত্তি: মির্যা সাহেবের মিথ্যাবাদী হবার একটি বড় প্রমাণ হচ্ছে, যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন আর যাদেরকে তিনি তাঁর আস্থাভাজন বলে মনে করতেন তাদের কয়েকজন তাঁকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে এবং তাঁকে কাফের ও মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছে। তিনি সত্যবাদী হয়ে থাকলে কেউ তাঁকে পরিত্যাগ করত না। 
উত্তর: আপনাদের অবগতির জন্য বলছি, সর্বশেষ ও সম্পূর্ণ সত্য ধর্ম ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং স্বয়ং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ। সবচেয়ে বড় এ সত্যকে আর সর্বশ্রেষ্ঠ এ নবীকে মান্য করার পরও হতভাগাদের একাংশ প্রকাশ্যভাবে ধর্মত্যাগ করেছে তথা ‘মুরতাদ’ হয়েছে। আর আপত্তিকারী এ জামা’ত থেকে সরে যাবার কারণে হযরত মির্যা সাহেবের সত্যতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদি তার এই প্রশ্ন সঠিক হয়ে থাকে তাহলে ইসলামের প্রাথমিক যুগে যারা মুরতাদ হয়েছিল তাদের বিষয়টি তিনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? ইহকালীন জীবন যে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র আর এ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ যে ঈমানের পরীক্ষা দিতে দিতে পার হয় এ বিষয়ে প্রত্যেকেই অবগত আছেন। অতীতেও বহু মানুষ এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে, তদনুযায়ী আহমদীয়াতের প্রাথমিক পর্যায়েও হয়েছে। কিন্তু এতে সত্যবাদীর সত্যতা বা সত্য জামা’তের ঈমান ম্লান হয় না। 
কেউ ধর্মত্যাগ করে চলে গেলে মুসলমানদের যে কোন ক্ষতি হবে না একথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ্ কুরআন শরীফে বলেছেন, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ
হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের মধ্য থেকে যে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ফিরে যায় এর বিনিময়ে আল্লাহ্ এমন এক জাতি নিয়ে আসবেন যাদেরকে আল্লাহ্ ভালবাসবেন এবং যারা আল্লাহকে ভালবাসবে। (সূরা মায়েদা: ৫৫-এর প্রথমাংশ) 
অতএব ইসলাম গ্রহণ করার পরও যে অভাগারা সত্যপথ পরিহার করতে পারে একথা স্পষ্টভাবে আল-কুরআনেই লেখা আছে। আর একথাও লেখা আছে, এরা ফিরে গেলে সত্য ধর্মের কোন ক্ষতিই হবে না বরং আল্লাহ্ এদের পরিবর্তে নতুন নতুন জাতি ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবেন। আর এটি সত্য জামাতের লক্ষণ। তাদের একজন ফিরে গেলে আল্লাহ তাদের সংখ্যা কমান না বরং অনেকগুণ বৃদ্ধি করে দেন। অতএব ঐশী জামা’ত তথা খোদার পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়ের মাঝেও কোন কোন অভাগা মুরতাদ হতে পারে একথা কুরআন দ্বারা সাব্যস্ত।
আরো একটি আপত্তি হল, হযরত মির্যা সাহেব যাদের প্রশংসা করেছেন তারা কীভাবে মুরতাদ হতে পারে? পাঠকবৃন্দ ভালভাবেই জানেন, মহানবী(সা.) সহীহ হাদীসে বলেছেন, 
إنما أصحابي كالنجوم ، فبأيهم اقتديتم اهتديتم
অর্থাৎ নিশ্চয় আমার সাহাবীরা তারকা সদৃশ, এদের যেকোন একজনের অনুসরণ করলেই তোমরা সঠিক পথ পেয়ে যাবে (ইবানাতুল কুবরা লি-ইবন্ বাত্তাহ)। যাদের এত প্রশংসা মহানবী(সা.) নিজে করেছেন তাদের কেউ কি কখনও মুরতাদ হয় নি? 
একবার একজন আরব বেদুঈন মদীনায় এসে মুসলমান হবার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে এটিকে ইসলাম গ্রহণের কুফল বলে মনে করে এবং প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে মহানবী(সা.)-এর চোখের সামনে মদীনা শরীফ ত্যাগ করে। রসূলুল্লাহ(সা.) তাকে যেতে বাধাও দেন নি অথবা তাকে হত্যাযোগ্য অপরাধীও সাব্যস্ত করেন নি (বুখারী, কিতাবুল হাজ্জ, বাব-আল মাদীনাতু তানফীল খুবুস)। 
এবার নৈকট্যপ্রাপ্ত একজন সাহাবীর ঘটনা। আব্দুল্লাহ্ বিন সা’দ বিন আবি সারাহ কুরআনের ওহী সংরক্ষণের কাজে লিপিকারের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি কেবল ধর্মত্যাগ করে মুরতাদই হন নি বরং মদীনা ছেড়ে মক্কায় গিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসীদের দলে যোগ দেন। মক্কা বিজয়ের দিন তাকে সাধারণ ক্ষমার আওতা বহির্ভূত রাখা হয়। পরবর্তীতে এই অপরাধী হযরত উসমান(রা.)-এর কাছে আশ্রয় নেয়। আর অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার কারণে এবং হযরত উসমানের সুপারিশে মহানবী(সা.) তাকে ক্ষমা করে দেন। কেবল তাই নয়, পরবর্তীতে এই ‘সাবেক মুরতাদ’ খলীফার পক্ষ থেকে মিশরের গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেন (ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত সীরাতুন নবী-ইবনে হিশাম, ৪র্থ খ-, পৃষ্ঠা ৬৪ ও ৬৫)। 
অতএব আপত্তিকারীর আপত্তি ধোপে টিকল না। কে মানল আর কে মানল না, কে টিকল আর কে টিকল না সেদিক না তাকিয়ে বুদ্ধিমানরা দাবিদারের দাবি মনোযোগ দিয়ে শুনে কুরআন, সুন্নত ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী তা যাচাই করে সত্য-মিথ্যা পরখ করে। আহমদীরা তাই করেছে এবং এসবই আমাদের কষ্টিপাথর। 
উল্লিখিত শামসুদ্দীন মুরতাদ মিস্ত্রী হামিদুদ্দীন সাহেবের ছেলে। ২০০৩ সালে নৈতিক পদস্খলনের কারণে তাকে আহমদীয়া জামা’ত থেকে বের করে দেয়া হলে সে যোগাযোগ ছেড়ে দেয়। 
অবশেষে ২০১৩ অর্থাৎ উক্ত বহিষ্কারের ১০ বছরের পর পাকিস্তানী মোল্লা-হুজুররা একে মসীহ মাওউদ(আ.)-এর খান্দানের সদস্য হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। যাকে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত অনৈতিক কাজের জন্য বহু বছর বহিষ্কার করেছে আর যে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে ধর্মব্যবসায়ী হুজুরদের কোলে আশ্রয় নিয়েছে তাকে নিয়ে গর্ব করা কারো পক্ষে সত্যিই শোভা পায় না। 

Friday, May 4, 2018

আপত্তি: মির্যা সাহেব ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ গ্রন্থ রচনার প্রাক্কালে বলেছিলেন, তিনি পঞ্চাশ খণ্ডে এই বইটি রচনা করবেন। আর একথা বলে তিনি মুসলমানদের কাছ থেকে চাঁদাও নিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ খণ্ডে লেখা সমাপ্ত করে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ পাঁচটিই পঞ্চাশের সমান। এটি এক ধরনের প্রতারণা।

উত্তর: ‘পাঁচ পঞ্চাশের সমান’ গাণিতিক হিসেবে একথা কখনো সঠিক নয়। গাণিতিক হিসেবে একথা বলাও হয় নি। বরং এ বাক্যের মাঝে নিশ্চয় এর চেয়ে গভীর কোন বিষয় লুকিয়ে আছে। যে ব্যক্তি গাণিতিক হিসেবে পাঁচ আর পঞ্চাশকে সমান বলে মনে করে সে বদ্ধ পাগল ছাড়া কিছুই নয়। আর বদ্ধ পাগলের বিরোধিতা পাগল ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। তাদের এই অভিযোগ উত্থাপন প্রমাণ করছে তাদের দৃষ্টিতেও মির্যা সাহেব পাগল (নাউযুবিল্লাহ্) নন। কেননা এমনটি হলে তিনি আপত্তিই করতেন না। 
এখানে এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে মির্যা সাহেব কোন হিসেবে পাঁচ ও পঞ্চাশকে সমান বলেছেন। আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে পুণ্যকর্মের পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন,
 مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ 
যে-ই পুণ্যকর্ম করবে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে দশগুণ পুণ্য। (সূরা আনআম: ১৬১ আয়াত) এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা’লা নিজ অনুগ্রহে পুণ্যকর্মকে বৃদ্ধি দান করেন। কী অর্থে বৃদ্ধি দান করেন? প্রভাব ও ফলাফলের দিক থেকে বৃদ্ধি দান করেন। অর্থাৎ একটি পুণ্যকর্ম নিজ প্রভাব ও ফলাফলের দিক থেকে ন্যূনতম দশগুণ হয়ে থাকে। একইভাবে মেরাজের হাদীসে উল্লেখ আছে, আল্লাহ্ তা’লা

আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, ‘বুখারী শরীফের ঐ সকল হাদীস সমূহ যাতে শেষ যুগের কিছু খলীফাদের ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঐ খলীফা, যার ব্যাপারে আসমান থেকে এই ডাক আসবে যে, ‘এই হল আল্লাহর খলীফা আল-মাহদী’। এবার ভাব, এটা কেমন মর্যাদাবান কিতাব, যাকে কুরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ মনে করা হয়!?’ [রূহানী খাযায়েন ৬/৩৩৭] আপত্তি হল, বুখারী শরীফের আশ্রয় নিয়ে মির্যা সাহেব নিজের ইমাম মাহদী হবার দাবীকে দৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন অথচ এই হাদীসটি বুখারীতে নেই! সত্য দাবীর জন্য মিথ্যা বলার কোন প্রয়োজন নেই।


উত্তর: আমরা মির্যা সাহেবকে রসূলুল্লাহ্(সা.)-এর কল্যাণে উম্মতী নবী হিসাবে মেনেছি। নবী মানুষ হয়ে থাকেন, তিনি খোদা নন। একমাত্র আল্লাহ্ সকল ভুল-ত্রুটি ও স্মৃতি-ভ্রমের ঊর্ধ্বে। নবী-রসূলরা মানবীয় দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নন। তদনুযায়ী বিভিন্ন সময় তাদের স্মৃতিভ্রম ঘটতে পারে। হযরত আদম (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে লেখা আছে,
وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَىٰ آدَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا
আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম, অতঃপর সে ভুলে গেল কিন্তু তার মাঝে আমি ইচ্ছাকৃত (পাপ) করার প্রবণতা দেখতে পাই নি (সূরা তাহা: ১১৬)। হযরত আদম(আ.)-এর এই ভুল করা সত্ত্বেও তাঁর নবী হওয়া নিয়ে কারও মনে কোন সংশয় নেই। হযরত মূসা(আ.) এবং তাঁর সাথী পথ চলতে চলতে নিজেদের মাছের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। এ সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ আছে,
   فلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوتَهُمَا
হযরত মূসা এবং তার সহচর উভয়ে মাছটির কথা ভুলে গেলেন (সূরা কাহ্ফ: ৬২)। এ স্মৃতিভ্রম সত্ত্বেও আপত্তিকারীর দৃষ্টিতে নিশ্চয় হযরত মূসা(আ.) সত্য নবী হিসেবেই স্বীকৃত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ ছিলেন না, তিনি মানুষই ছিলেন। বুখারী শরীফের কিতাবুস সালাত- এর হাদীসটি দেখুন,

Wednesday, April 18, 2018

দেশবাসীর ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আমাদের নিবেদন

ধর্মের অধিপতি কোন মোল্লা বা রাষ্ট্র নয়। মহানবী(সা.) বলেছেন, যে আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলামুখি হয়, আমাদের জবাই করা পশু খায় সে এমন মুসলমান যার দায়-দায়িত্ব আল্লাহ ও রসূলের। অতএব তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর দায়িত্বে নাক না গলায়। (বুখারী) 
 হায়, বর্তমান যুগের মোল্লারা নবীজির বাণী ও আল্লাহর নৈকট্যের চেয়ে জাগতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এতবড় ধৃষ্টতা করতে পারে যে, তারা মুসলমান দাবীকারী, কলেমা পাঠকারীকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা করতে দ্বিধা করে না। সাধারণ মুসলমানদের কাছে আমার সবিনয় প্রশ্ন আপনি কি মোল্লা-হুজুরদের রাজনৈতিক ইসলাম পালন করেন নাকি মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর ইসলাম পালন করেন? মহানবী(সা.)-এর ইসলাম আপনাকে শান্তির সশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দান করবে আর মোল্লাদের ইসলাম আপনাকে সংঘাত ও নৈরাজ্যের এক অতল গহবরে নিপতিত করবে। অতএব এটি আপনার বিবেকের কাছে প্রশ্ন। 
আজ যদি বাংলার মুসলমানরা বিবেক না খাটায় আর তাদের চোখের সামনে পাকিস্তানের শিক্ষণীয় চিত্রও যদি তাদের না শেখায় তাহলে সত্যিই ভাববার বিষয়। কেউই নিরাপদ থাকবে না। কেননা, এসব মোল্লারা ইসলাম নয় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আজ তারা আহমদীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করছে। কাল অন্য ফেরকাকে করবে একথা নিশ্চিত। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই উগ্রপন্থীরা, স্বার্থবাদীরা নিজেদের স্বার্থ দেখেছে তখনই যে কাউকে কাফের ঘোষণা করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছে। আইসিস সকলের জন্য দৃষ্টান্ত, কীভাবে তারা কাফের ঘোষণা দিয়ে যাকে চাচ্ছে হত্যা করছে। পাকিস্তান দৃষ্টান্ত, কিভাবে একদল অন্যদলকে কাফের ফতোয়া দিয়ে হত্যা করছে। 
অতএব হে বাংলার মানুষ, মোল্লাদের এই আন্দোলন বাহ্যত আহমদীদের বিরুদ্ধে মনে হলেও তা দিন শেষে দেখবেন তা আপনার বিরুদ্ধেও। যারা আজ চুপ থাকবে আর ভাববে আমরা তো আন্দোলনের লক্ষ্য নই তারা চরম ভুল করবেন। অতএব মোল্লাদের এ আন্দোলন অ-ইসলামিক, বাঙালী চেতনা পরিপন্থী এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সচেতন দেশবাসীর প্রতি আমাদের সবিনয় নিবেদনটি যারা দেশের বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে দয়া করে পড়ে নিবেন। 
 আমরা আহমদীরা কোন আন্দোলনকে ভয় করি না। আলা ইন্না হিযবাল্লাহি হুমুল গালিবূন, আল্লাহ বলেন, জেনে নাও নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয় লাভ করবে। আজ ১২৯ বছর ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠরা আহমদীদের বিরুদ্ধে যারপর নাই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে কিন্তু সফলতা ও বিজয় কেবল আর কেবল আহমদীদের হাতেই। এবারও তা-ই হবে, কেননা এ জামাত কোন মানুষ হাত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয় এ জামা’ত স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এটি খোদা তালার অটল তকদীর দুনিয়ার কোন শক্তি নেই যে এই তকদীর বদলাতে পারে। সৌভাগ্যবান তারা যারা আল্লাহর দলে থাকে। 
 অতএব আমাদের দৃঢ় একীন, যারা এ জামাতকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করবে তাদের আল্লাহ তালা নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। যারা এ জামাতকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করবে তা লাঞ্ছিত হবে। একথা নিশ্চিত নিশ্চিত নিশ্চিত।

Tuesday, January 23, 2018

আপত্তি: আকমল নামের এক ব্যক্তির একটি কবিতার একটি লাইনে রয়েছে, ‘মুহাম্মদ আবার আমাদের মাঝে এসেছে, মর্যাদায় আগের চেয়ে সামনে বেড়ে পূর্ণাঙ্গীন মুহাম্মদকে যদি কেউ দেখতে চাও কাদিয়ানে এসে গোলাম আহমদকে দেখে যাও।’

উত্তর: এ বক্তব্য মির্যা সাহেবের নয়, আহমদীয়া জামাতের কোন খলীফারও নয়। অতএব এই অভিযোগটি আহমদীয়া জামা’তের বিরুদ্ধে আরোপিত হতে পারে না। এরপরও এই কবিতাংশটি যখন আহমদীয়া জামা’তের দ্বিতীয় খলীফা হযরত মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ (রা.)Ñএর সামনে উপস্থাপন করা হয় তিনি উত্তরে বলেন, ‘যদি এতে উন্নত মর্যাদা বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে এমন বিশ্বাস নিঃসন্দেহে কুফরী।’ এরপর স্পষ্ট করে বলেছেন, যে অর্থেই এমন শব্দ ব্যবহার করা হোক না কেন ‘এটি চরম অপছন্দনীয় ও বে-আদবী’ (আলফজল, ১৯ আগস্ট ১৯৩৪)। যারা এত ঘাটাঘাটি করে আপত্তি করার সুযোগ খুঁজে বের করছে তারা কি এর প্রতিক্রিয়া দেখে নি। নিশ্চয়ই দেখেছে! কিন্তু সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য এবং সামাজিক অশান্তি ও নৈরাজ্য ছড়ানোর উদ্দেশ্যে আপত্তিকারীরা এমন ভিত্তিহীন আপত্তি করে যাচ্ছে।

আপত্তি: ১৭ জুলাই ১৯২২ তারিখের আল-ফজলে আহমদীয়া জামাতের দ্বিতীয় খলীফা বলেছেন, ‘আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে উন্নতি করতে পারে এমনকি মুহাম্মদ (সা.)-এর চেয়েও বেশী উন্নতি করতে পারে।’

উত্তর: কোন উদ্ধৃতির খ-িত অসম্পূর্ণ অংশ তুলে ধরে আপত্তিকারীরা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করেছে। কেননা, ঠিক পরের লাইনেই লেখা আছে, ‘কিন্তু দেখার বিষয় হল, আধ্যাত্মিকতার এই ময়দানে সবচেয়ে বেশী উন্নতি করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। শুধু তাই নয় আল্লাহ তা’লা এ সাক্ষীও দিয়েছেন তিনি(সা.) পরবর্তীতে আগমনকারীদের থেকেও উন্নত পর্যায়ে রয়েছেন।’ আপত্তিকারী নিজের পক্ষ থেকে নিছক আপত্তি করার জন্য এই অংশটুকু বাদ দিয়ে দিয়েছে; এটি কী কোন সৎ মুসলমানের কাজ হতে পারে? পাঠকের বিবেকের কাছে প্রশ্ন। বরং আধ্যাত্মিক ময়দানে প্রত্যেকেই উন্নতি করতে পারে বলে স্পষ্ট করেছেন, আধ্যাত্মিকতার ময়দান সবার জন্য উন্মুক্ত না থাকলে অপরাপর মানুষের তুলনায় মুহাম্মদ(সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বা কৃতিত্ব প্রমাণ হয় না। এর উদাহরণ এভাবেও দেয়া যায়, ধরুন কোন দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে আর তাতে একজন এমন রেকর্ড করল যাকে বিশ্বরেকর্ড আখ্যায়িত করা হল। এই ঘোষণায় প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হয় নি। প্রতিযোগিতা সবার জন্য উন্মুক্ত সবাই নিজেকে এই ময়দানে যাচাই করে দেখতে পারে। এ বিষয়টিই আধ্যাত্মিকতার ময়দান সম্পর্কে মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রা.) বলেছেন অর্থাৎ মহানবী(সা.) আধ্যাত্মিকতার ময়দানে বিশ্বরেকর্ড করেছেন, কিন্তু অন্যদের জন্য এই ময়দান বন্ধ বা রুদ্ধ করে দেয়া হয় নি। ১৭ই জুলাই ১৯২২ সালের আল-ফজল পত্রিকার যেখানে আপত্তি তোলা হয়েছে ঠিক সেখানেই আহমদীয়া জামা’তের দ্বিতীয় খলীফা লিখেছেন, আল্লাহ তা’লা যেহেতু সব বিষয় ও যুগ সম্পর্কে অবহিত তাই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ভবিষ্যতেও এমন কোন মানুষের জন্ম হবে না যে মুহাম্মদ(সা.)-কে পেছনে ফেলতে পারে (বক্স দ্রষ্টব্য)। অতএব, উন্নতির ময়দান ও মার্গ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও হযরত মুহাম্মদ(সা.) সবচেয়ে বেশী উন্নতি করেছেন এবং উৎকর্ষে সব যুগের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। এটিই মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব। অতএব আহমদীরা কখনই মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার করে নি, করতেই পারে না।

আপত্তি: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) মুসলমানদেরকে কাফের বলেছেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।

উত্তর: আমাদের চ্যালেঞ্জ, এটিও এক জঘন্য অপবাদ! লা’নাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কখনও মুসলমানদের কাফের বলেন নি বরং মুসলমানদের সপক্ষে ইসলাম-বিদ্বেষীদের সাথে সারা জীবন কলমের জিহাদ করেছেন। তবে রসূলুল্লাহ(সা.)-এর সতর্কবাণী অমান্য করে যেসব আলেম-উলামা মুসলমানদেরই একাংশকে কাফের বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তাদেরকে তিনি রসূলুল্লাহ(সা.) প্রদত্ত কুফরী ফতোয়া শুনিয়ে দিয়েছেন মাত্র। (হকীকাতুল ওহী এবং তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ দ্রষ্টব্য) মহানবী(সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘যে মুহূর্তে একজন মুসলমান তার অপর মুসলমান ভাইকে কাফের বলে আখ্যা দেয় তখন নির্ঘাত এটি এই দু’জনের একজনের ওপর অবশ্যই বর্তায়।’( মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান দ্রষ্টব্য)।

আপত্তি: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) নবীগণের সাথে বে-আদবী করেছেন বা তাদের সম্মানে আঘাত হেনেছেন।

উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ) কোন নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তিও করেন নি বা বে-আদবীও করেন নি। তিনি নিজে বলেছেন, ‘আমি সমস্ত নবীর প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করা আমার ঈমানের অঙ্গ বলে মনে করি (মলফূযাত, ১ম খ- পৃষ্ঠা-৪২০)। তবে হ্যাঁ, খ্রিস্টানদের কল্পিত যিশুর ইশ্বরত্ব খ-ন করতে গিয়ে তিনি তাদের ধর্মবিশ্বাসের আলোকে, তাদেরই ধর্মগ্রন্থ থেকে কয়েকটি কথা উদ্ধৃত করে কড়া জবাব দিয়েছেন। এগুলো কটুক্তি বা বে-আদবী নয় বরং অসুস্থ রোগীদের তেঁতো ঔষধ খাইয়ে সুস্থ্য করার একটি প্রয়াস মাত্র। খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব মোল্লা-মৌলভীসাহেবদের বোধহয় সহ্য হয় না!

আপত্তি: মির্যা সাহেব এমন নবুওতের দাবি করেছেন যা প্রকাশ্য কুফরি।

উত্তর: আসতাগফিরুল্লাহ্, ডাহা মিথ্যা অপবাদ। তিনি কখনও শরীয়তবাহক, স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নবুওতের দাবি করেন নি বরং তিনি সেই দাসত্বের নবুওত লাভ করার দাবি করেছেন যা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৭০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। পাঠকদের অবগতির জন্য একথাও জানা আবশ্যক, মহানবী(সা.) তাঁর উম্মতের সংশোধনের জন্য ঈসা নবীউল্লাহর আগমন বার্তা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে গেছেন (মুসলিম, ইবনে মাজা দ্রষ্টব্য)। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) ইহুদী নবী ঈসা(আ.)-এর মৃত্যু পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ করত: আল্লাহ্র আদেশে নিজেকে রূপক অর্থে সেই ঈসা নবীউল্লাহ্ হিসেবে দাবি করেছেন। এ ধরনের নবুওতের কথা স্বয়ং রসূলুল্লাহ্(সা.) বলে গেছেন। তাই মহানবী(সা.)-এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মোল্লা-মৌলভীদের যাবতীয় ফতোয়া পরিত্যাজ্য।

আপত্তি: আহমদীরা খতমে নবুওত অস্বীকারকারী

উত্তর: এটি একটি ডাহা মিথ্যা। আমরা হযরত মুহাম্মদ(সা.)-কে খাতামান নবীঈন বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) নিজেও একমাত্র মহানবী(সা.)-কেই খাতামান নবীঈন বলে বিশ্বাস করতেন। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, ‘আমরা কুরআনকে খোদার কিতাব এবং তাঁর রসূল খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আয়ায়হে ওয়া সাল্লামকে মানি’ (নূরুল হক, খ- ১ পৃ. ৫ দ্রষ্টব্য)। এছাড়া আরও অনেক স্থানে আহমদীয়া জামা’তের খাতামান নবীঈন-এ বিশ্বাস স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হয়। আহমদীয়া জামা’তের বয়াত ফরমেও  লেখা আছে: ‘হযরত মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ (সা.)-কে আমি খাতামান নবীঈন বলে দৃঢ় ও পরিপূর্ণ বিশ্বাস পোষণ করি।’ একইভাবে আহমদীয়া জামা’ত কর্তৃক প্রকাশিত কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদে সূরা আহযাবের ৪১ নং আয়াতের তফসীরে লেখা আছে, ‘মহানবী (সা.) হলেন আল্লাহর রসূল, যাতে এটাই বুঝায় তিনি সারা উম্মতের আধ্যাত্মিক পিতা। শুধু তা-ই নয়, তিনি খাতামান নবীঈনও বটে।’ অতএব অভিযোগটি যে ডাহা মিথ্যা তা সাব্যস্ত হল।

Thursday, January 18, 2018

বাহাত্তর দল মিলে একদলকে কাফের ঘোষণা। (72)+ (1)

মহানবী (সা.) তিহাত্তর দলের মাঝে একদলকে জান্নাতি আর বাহাত্তরকে জাহান্নামী আক্ষা দিয়েছেন।