Tuesday, January 23, 2018

আপত্তি: আকমল নামের এক ব্যক্তির একটি কবিতার একটি লাইনে রয়েছে, ‘মুহাম্মদ আবার আমাদের মাঝে এসেছে, মর্যাদায় আগের চেয়ে সামনে বেড়ে পূর্ণাঙ্গীন মুহাম্মদকে যদি কেউ দেখতে চাও কাদিয়ানে এসে গোলাম আহমদকে দেখে যাও।’

উত্তর: এ বক্তব্য মির্যা সাহেবের নয়, আহমদীয়া জামাতের কোন খলীফারও নয়। অতএব এই অভিযোগটি আহমদীয়া জামা’তের বিরুদ্ধে আরোপিত হতে পারে না। এরপরও এই কবিতাংশটি যখন আহমদীয়া জামা’তের দ্বিতীয় খলীফা হযরত মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ (রা.)Ñএর সামনে উপস্থাপন করা হয় তিনি উত্তরে বলেন, ‘যদি এতে উন্নত মর্যাদা বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে এমন বিশ্বাস নিঃসন্দেহে কুফরী।’ এরপর স্পষ্ট করে বলেছেন, যে অর্থেই এমন শব্দ ব্যবহার করা হোক না কেন ‘এটি চরম অপছন্দনীয় ও বে-আদবী’ (আলফজল, ১৯ আগস্ট ১৯৩৪)। যারা এত ঘাটাঘাটি করে আপত্তি করার সুযোগ খুঁজে বের করছে তারা কি এর প্রতিক্রিয়া দেখে নি। নিশ্চয়ই দেখেছে! কিন্তু সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য এবং সামাজিক অশান্তি ও নৈরাজ্য ছড়ানোর উদ্দেশ্যে আপত্তিকারীরা এমন ভিত্তিহীন আপত্তি করে যাচ্ছে।

আপত্তি: ১৭ জুলাই ১৯২২ তারিখের আল-ফজলে আহমদীয়া জামাতের দ্বিতীয় খলীফা বলেছেন, ‘আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে উন্নতি করতে পারে এমনকি মুহাম্মদ (সা.)-এর চেয়েও বেশী উন্নতি করতে পারে।’

উত্তর: কোন উদ্ধৃতির খ-িত অসম্পূর্ণ অংশ তুলে ধরে আপত্তিকারীরা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করেছে। কেননা, ঠিক পরের লাইনেই লেখা আছে, ‘কিন্তু দেখার বিষয় হল, আধ্যাত্মিকতার এই ময়দানে সবচেয়ে বেশী উন্নতি করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। শুধু তাই নয় আল্লাহ তা’লা এ সাক্ষীও দিয়েছেন তিনি(সা.) পরবর্তীতে আগমনকারীদের থেকেও উন্নত পর্যায়ে রয়েছেন।’ আপত্তিকারী নিজের পক্ষ থেকে নিছক আপত্তি করার জন্য এই অংশটুকু বাদ দিয়ে দিয়েছে; এটি কী কোন সৎ মুসলমানের কাজ হতে পারে? পাঠকের বিবেকের কাছে প্রশ্ন। বরং আধ্যাত্মিক ময়দানে প্রত্যেকেই উন্নতি করতে পারে বলে স্পষ্ট করেছেন, আধ্যাত্মিকতার ময়দান সবার জন্য উন্মুক্ত না থাকলে অপরাপর মানুষের তুলনায় মুহাম্মদ(সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বা কৃতিত্ব প্রমাণ হয় না। এর উদাহরণ এভাবেও দেয়া যায়, ধরুন কোন দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে আর তাতে একজন এমন রেকর্ড করল যাকে বিশ্বরেকর্ড আখ্যায়িত করা হল। এই ঘোষণায় প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হয় নি। প্রতিযোগিতা সবার জন্য উন্মুক্ত সবাই নিজেকে এই ময়দানে যাচাই করে দেখতে পারে। এ বিষয়টিই আধ্যাত্মিকতার ময়দান সম্পর্কে মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রা.) বলেছেন অর্থাৎ মহানবী(সা.) আধ্যাত্মিকতার ময়দানে বিশ্বরেকর্ড করেছেন, কিন্তু অন্যদের জন্য এই ময়দান বন্ধ বা রুদ্ধ করে দেয়া হয় নি। ১৭ই জুলাই ১৯২২ সালের আল-ফজল পত্রিকার যেখানে আপত্তি তোলা হয়েছে ঠিক সেখানেই আহমদীয়া জামা’তের দ্বিতীয় খলীফা লিখেছেন, আল্লাহ তা’লা যেহেতু সব বিষয় ও যুগ সম্পর্কে অবহিত তাই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ভবিষ্যতেও এমন কোন মানুষের জন্ম হবে না যে মুহাম্মদ(সা.)-কে পেছনে ফেলতে পারে (বক্স দ্রষ্টব্য)। অতএব, উন্নতির ময়দান ও মার্গ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও হযরত মুহাম্মদ(সা.) সবচেয়ে বেশী উন্নতি করেছেন এবং উৎকর্ষে সব যুগের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। এটিই মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব। অতএব আহমদীরা কখনই মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার করে নি, করতেই পারে না।

আপত্তি: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) মুসলমানদেরকে কাফের বলেছেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।

উত্তর: আমাদের চ্যালেঞ্জ, এটিও এক জঘন্য অপবাদ! লা’নাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কখনও মুসলমানদের কাফের বলেন নি বরং মুসলমানদের সপক্ষে ইসলাম-বিদ্বেষীদের সাথে সারা জীবন কলমের জিহাদ করেছেন। তবে রসূলুল্লাহ(সা.)-এর সতর্কবাণী অমান্য করে যেসব আলেম-উলামা মুসলমানদেরই একাংশকে কাফের বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তাদেরকে তিনি রসূলুল্লাহ(সা.) প্রদত্ত কুফরী ফতোয়া শুনিয়ে দিয়েছেন মাত্র। (হকীকাতুল ওহী এবং তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ দ্রষ্টব্য) মহানবী(সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘যে মুহূর্তে একজন মুসলমান তার অপর মুসলমান ভাইকে কাফের বলে আখ্যা দেয় তখন নির্ঘাত এটি এই দু’জনের একজনের ওপর অবশ্যই বর্তায়।’( মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান দ্রষ্টব্য)।

আপত্তি: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) নবীগণের সাথে বে-আদবী করেছেন বা তাদের সম্মানে আঘাত হেনেছেন।

উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ) কোন নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তিও করেন নি বা বে-আদবীও করেন নি। তিনি নিজে বলেছেন, ‘আমি সমস্ত নবীর প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করা আমার ঈমানের অঙ্গ বলে মনে করি (মলফূযাত, ১ম খ- পৃষ্ঠা-৪২০)। তবে হ্যাঁ, খ্রিস্টানদের কল্পিত যিশুর ইশ্বরত্ব খ-ন করতে গিয়ে তিনি তাদের ধর্মবিশ্বাসের আলোকে, তাদেরই ধর্মগ্রন্থ থেকে কয়েকটি কথা উদ্ধৃত করে কড়া জবাব দিয়েছেন। এগুলো কটুক্তি বা বে-আদবী নয় বরং অসুস্থ রোগীদের তেঁতো ঔষধ খাইয়ে সুস্থ্য করার একটি প্রয়াস মাত্র। খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব মোল্লা-মৌলভীসাহেবদের বোধহয় সহ্য হয় না!

আপত্তি: মির্যা সাহেব এমন নবুওতের দাবি করেছেন যা প্রকাশ্য কুফরি।

উত্তর: আসতাগফিরুল্লাহ্, ডাহা মিথ্যা অপবাদ। তিনি কখনও শরীয়তবাহক, স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নবুওতের দাবি করেন নি বরং তিনি সেই দাসত্বের নবুওত লাভ করার দাবি করেছেন যা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৭০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। পাঠকদের অবগতির জন্য একথাও জানা আবশ্যক, মহানবী(সা.) তাঁর উম্মতের সংশোধনের জন্য ঈসা নবীউল্লাহর আগমন বার্তা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে গেছেন (মুসলিম, ইবনে মাজা দ্রষ্টব্য)। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) ইহুদী নবী ঈসা(আ.)-এর মৃত্যু পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ করত: আল্লাহ্র আদেশে নিজেকে রূপক অর্থে সেই ঈসা নবীউল্লাহ্ হিসেবে দাবি করেছেন। এ ধরনের নবুওতের কথা স্বয়ং রসূলুল্লাহ্(সা.) বলে গেছেন। তাই মহানবী(সা.)-এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মোল্লা-মৌলভীদের যাবতীয় ফতোয়া পরিত্যাজ্য।

আপত্তি: আহমদীরা খতমে নবুওত অস্বীকারকারী

উত্তর: এটি একটি ডাহা মিথ্যা। আমরা হযরত মুহাম্মদ(সা.)-কে খাতামান নবীঈন বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) নিজেও একমাত্র মহানবী(সা.)-কেই খাতামান নবীঈন বলে বিশ্বাস করতেন। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, ‘আমরা কুরআনকে খোদার কিতাব এবং তাঁর রসূল খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আয়ায়হে ওয়া সাল্লামকে মানি’ (নূরুল হক, খ- ১ পৃ. ৫ দ্রষ্টব্য)। এছাড়া আরও অনেক স্থানে আহমদীয়া জামা’তের খাতামান নবীঈন-এ বিশ্বাস স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হয়। আহমদীয়া জামা’তের বয়াত ফরমেও  লেখা আছে: ‘হযরত মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ (সা.)-কে আমি খাতামান নবীঈন বলে দৃঢ় ও পরিপূর্ণ বিশ্বাস পোষণ করি।’ একইভাবে আহমদীয়া জামা’ত কর্তৃক প্রকাশিত কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদে সূরা আহযাবের ৪১ নং আয়াতের তফসীরে লেখা আছে, ‘মহানবী (সা.) হলেন আল্লাহর রসূল, যাতে এটাই বুঝায় তিনি সারা উম্মতের আধ্যাত্মিক পিতা। শুধু তা-ই নয়, তিনি খাতামান নবীঈনও বটে।’ অতএব অভিযোগটি যে ডাহা মিথ্যা তা সাব্যস্ত হল।

Thursday, January 18, 2018

বাহাত্তর দল মিলে একদলকে কাফের ঘোষণা। (72)+ (1)

মহানবী (সা.) তিহাত্তর দলের মাঝে একদলকে জান্নাতি আর বাহাত্তরকে জাহান্নামী আক্ষা দিয়েছেন।