Nibedon

https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhu04wXgF1uxqX3GvR-tRyVJJauqJe9Ks2aPAsUt0FGlny53R7endg5hE-nM1cb7hxhMoXzWTScLZR5r30M2HuCX_6OZHzQSdH-luPo8tvVNmpqRlWw-sA38FbwwjhVdKXoAFqLK36BSX0/s1600/Advertisement+Manabkantha+9th+page+with+awwal+sb+note.jpg

"দেশবাসীর প্রতি আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের নিবেদন" বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানায় একটি উগ্র-ধর্মান্ধচক্র আহমদীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও বিষোদ্গার করছে। সরকার ও প্রশাসনের সময়োচিত পদক্ষেপে এই চক্রটি গত ১লা এপ্রিল নাসিরনগরে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়ে এখন আগামী ২০শে এপ্রিল ‘শানে রিসালাত ও খতমে নবুয়ত’ নামে একটি সম্মেলন আহ্বান করেছে। এর উদ্দেশ্য হল, আহমদী মুসলমানদেরকে সরকারীভাবে কাফের ঘোষণা করার দাবি উত্থাপন ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। এ প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমাদের সবিনয় নিবেদন নিম্নরূপ-
· কোন দেশের সরকার তার নাগরিকদের ধর্ম নিরূপণ ও নির্ধারণ করার অধিকার রাখে কি? আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল(সা.) কি কাউকে এই ক্ষমতা দিয়েছেন?
· কোন সরকার যদি মুসলমানকে কাফের ঘোষণা দেয়ার অধিকার রাখে তাহলে সেই সরকার নিশ্চিতভাবে কাফেরকেও মুসলমান ঘোষণা দেয়ার অধিকার রাখে। একটি দেশের সরকার যদি সে দেশের হিন্দুদেরকে মুসলমান বলে ঘোষণা দেয় তবে কি তারা সত্যি সত্যিই মুসলমান হয়ে যাবে? একইভাবে, নিছক একটি সরকারী ঘোষণা কি অমুসলিমকেও মুসলমান বানাতে পারে?
 · কোন মুসলিম সম্প্রদায়কে সরকারী ঘোষণায় কাফের বানানোর অর্থই হল, উক্ত ঘোষণার পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত তারা মুসলমান ছিল, নইলে এ ধরনের ঘোষণার কোন অর্থই হয় না। আমাদের প্রশ্ন, বিশ্বাস পরিবর্তন না করে কেবল একটি সরকারী ঘোষণা কি কারও ধর্ম পরিবর্তন করে দিতে পারে?
 · ৭২ ফিরকার আলেম-উলামা সম্মিলিতভাবে যখন আহমদীদেরকে কাফের ঘোষণা করেই রেখেছেন তখন আবার সরকারী ঘোষণার প্রয়োজনটা কী? · যেসব মৌলভী-মৌলানা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তকে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন তারা নিজেদের ‘মুসলমানিত্বের’ সার্টিফিকেট কোন সরকারী ঘোষণার মাধ্যমে লাভ করেছেন কি?
 · আমরা অর্থাৎ আহমদীরা পবিত্র কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-তে সর্বান্তকরণে বিশ্বাসী। এ ছাড়া নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত আমরা যথারীতি পালন করি। তা সত্ত্বেও যদি আমাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয় তাহলে কুরআন-হাদীস প্রদত্ত মুসলমানের সংজ্ঞা বদলাতে হবে। সহীহ হাদীসে লেখা আছে, হযরত আনাস বিন মালিক(রা.) বর্ণিত, মহানবী(সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আমাদের মত নামাজ পড়ে, আমাদের ক্বিবলামুখী হয় এবং আমাদের জবাই করা মাংস খায় সে এমন মুসলমান যার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল গ্রহণ করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র দায়িত্বে হস্তক্ষেপ করো না’ (বুখারী, কিতাবুস সালাত)। আবার হযরত হুযায়ফা(রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী(সা.) বলেছেন, ‘আমার জন্য এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে মুসলমানদের তালিকাভুক্ত কর যে নিজের মুখে মুসলমান হবার ঘোষণা দেয়...’ (বুখারী, কিতাবুল জিহাদ)। আমাদের প্রশ্ন হল, কোন মানুষ কি মহানবী(সা.) প্রদত্ত মুসলমানের এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে? যারা এর বিরুদ্ধে গিয়ে অন্যকে কাফের ফতোয়া দিচ্ছে তারা কি আল্লাহর রসূলের(সা.) অবাধ্যতা করছে না?
 · আল্লাহ তা’লা প্রত্যেক ব্যক্তিকে এ পৃথিবীতে যে কোন ধর্ম গ্রহণ বা বর্জনের স্বাধীনতা দান করেছেন। তাই ধর্ম বিষয়ে বিচার করার অধিকার একমাত্র তিনিই রাখেন। মানুষ কি আল্লাহর এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে?

এসব প্রশ্ন আমরা পাঠকের বিবেকের কাছে রেখে অতি সংক্ষেপে আমাদের ধর্মবিশ্বাস তুলে ধরছি। আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) বলেন, ‘আমরা ঈমান রাখি, খোদা তা’লা ছাড়া কোন মা’বুদ নাই এবং সৈয়্যদনা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসূল এবং খাতামুল আম্বিয়া। আমরা ঈমান রাখি, ফিরিশতা, হাশর, বিচার দিবস, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য এবং আমরা আরও ঈমান রাখি, কুরআন শরীফে আল্লাহ তা’লা যা বলেছেন এবং আমাদের নবী(সা.) কর্তৃক যা বর্ণিত হয়েছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তা সবই সত্য। আমরা আরও ঈমান রাখি, যে ব্যক্তি এই ইসলামী শরীয়ত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয় অথবা যে বিষয়গুলো অবশ্যকরণীয় বলে নির্ধারিত তা পরিত্যাগ করে এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধকরণের ভিত্তি স্থাপন করে সে ব্যক্তি বেঈমান এবং ইসলামের গ-িবহির্ভূত। আমি আমার জামা’তকে উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পবিত্র কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’-এর প্রতি ঈমান রাখে এবং এই ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। কুরআন শরীফ থেকে যাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী(আলাইহিমুস সালাম) এবং কিতাবের প্রতি ঈমান আনবে। নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত এবং এতদ্ব্যতীত খোদা তা’লা এবং তাঁর রসূল(সা.) কর্তৃক নির্ধারিত কতর্ব্যসমূহকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্যকরণীয় মনে করে, যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়কে নিষিদ্ধ মনে করে সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করবে। মোটকথা, যে সমস্ত বিষয়ে আকিদা ও আমল হিসেবে পূর্ববর্তী বুযুর্গানের ‘ইজমা’ অর্থাৎ সর্ববাদি সম্মত মত ছিল এবং যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামা’তের সর্ববাদি সম্মত মতে ইসলাম নাম দেওয়া হয়েছে, তা সর্বতোভাবে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য’ (আইয়ামুস সুলেহ পুস্তক, পৃ. ৮৭)।
আমাদের বিরুদ্ধে ‘খতমে নবুয়ত’ না মানার মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। খতমে নবুয়ত সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) হলেন ‘খাতামান নবীঈন’। আরবী ভাষায় ‘খাতাম’ শব্দের যত অর্থ আছে সব অর্থেই আমরা মহানবী(সা.)-কে ‘খাতামান নবীঈন’ বলে মান্য করি। সর্বশেষ শরীয়ত-বাহক নবী হিসেবেও তিনি ‘শেষ নবী’ আর নবুয়তের উৎকর্ষের শেষ মার্গ অর্জনকারী হিসেবেও তিনিই ‘শেষ নবী’। আমরা ‘খাতামান নবীঈন’ উপাধির সেই একই ব্যাখ্যা মান্য করি যা উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা(রা.) বর্ণনা করে গেছেন। দেওবন্দী মাদরাসা ও মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবী সাহেব তার তাহযীরুন্নাস পুস্তকে ‘খতমে নবুয়তের’ যে বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন তার সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত।
 অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল, আমরা ইসলামের সব মৌলিক শিক্ষা মানি ও পালন করি। কেবল তাই নয় সারা বিশেষ শুধুমাত্র আমরাই একক ঐশী খলীফার নেতৃত্বে ইসলাম প্রচারে রত আছি এবং আমাদের তবলীগে বিপুল সংখ্যক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করছে, আলহামদুলিল্লাহ্। আমাদের সাথে অন্যান্য মুসলমানদের পার্থক্য একটি ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতাকে কেন্দ্র করে। মহানবী(সা.) বলে গেছেন, শেষযুগে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য, সারা পৃথিবীতে ইসলামের চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে রসূলুল্লাহ(সা.)-এর উম্মতে এক মহান নেতা ইমাম মাহদী(আ.)-এর আবির্র্ভাব ঘটবে। আহমদী মুসলমানরা বিশ্বাস করে, মহানবী(সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সেই প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী ইতিমধ্যে আবির্ভূত হয়ে গেছেন। তাঁর পবিত্র নাম হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)। আর অন্যান্য মুসলমান বিশ্বাস করেন ইমাম মাহদী(আ.) আসবেন ঠিকই কিন্তু এখনো আসেন নি। বিষয়টি এতটুকুই। তিনি এসেছেন কি আসেন নি এ প্রশ্নের সমাধান দোয়া, গবেষণা ও নিদর্শন প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে করা সম্ভব। মিছিল, আন্দোলন, ভাংচুর বা কোন সরকারী ঘোষণা এ প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে কি না তা শান্তিপ্রিয় ও ধর্মভীরু নাগরিকদের ভেবে দেখতে হবে। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই উগ্র-ধর্মান্ধদের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে দখলকৃত চারটি আহমদীয়া মসজিদ আমরা আজও ফিরে পাই নি।

বর্তমানে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যখন মুসলমানদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তখন মুসলমানদের দায়িত্ব, বিভেদ ছেড়ে ঐক্য ও সৌহার্দ্যরে পথ অন্বেষণ করা। নির্বাচনের এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশের কোথাও যেন এই উগ্র চক্র নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উগ্র-ধর্মান্ধদের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আমরা কী বিশ্বাস করি এবং কেন করি তা আমাদের কাছ থেকে সরাসরি জেনে নিন।

প্রচার ও গণসংযোগ বিভাগ, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বাংলাদেশ। ৪ বকশি বাজার রোড, ঢাকা-১২১১ 
 ফোন: ০২৫৭৩০০৮০৮/১০০ ই-মেইল: enquiryahmadiyya@gmail.com, ওয়েবসাইট: www.alislam.org, www.ahmadiyyabangla.org, www.mta.tv

No comments:

Post a Comment