উত্তর: ‘পাঁচ পঞ্চাশের সমান’ গাণিতিক হিসেবে একথা কখনো সঠিক নয়। গাণিতিক হিসেবে একথা বলাও হয় নি। বরং এ বাক্যের মাঝে নিশ্চয় এর চেয়ে গভীর কোন বিষয় লুকিয়ে আছে। যে ব্যক্তি গাণিতিক হিসেবে পাঁচ আর পঞ্চাশকে সমান বলে মনে করে সে বদ্ধ পাগল ছাড়া কিছুই নয়। আর বদ্ধ পাগলের বিরোধিতা পাগল ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। তাদের এই অভিযোগ উত্থাপন প্রমাণ করছে তাদের দৃষ্টিতেও মির্যা সাহেব পাগল (নাউযুবিল্লাহ্) নন। কেননা এমনটি হলে তিনি আপত্তিই করতেন না।
এখানে এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে মির্যা সাহেব কোন হিসেবে পাঁচ ও পঞ্চাশকে সমান বলেছেন।
আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে পুণ্যকর্মের পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন,
مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ
যে-ই পুণ্যকর্ম করবে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে দশগুণ পুণ্য। (সূরা আনআম: ১৬১ আয়াত)
এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা’লা নিজ অনুগ্রহে পুণ্যকর্মকে বৃদ্ধি দান করেন। কী অর্থে বৃদ্ধি দান করেন? প্রভাব ও ফলাফলের দিক থেকে বৃদ্ধি দান করেন। অর্থাৎ একটি পুণ্যকর্ম নিজ প্রভাব ও ফলাফলের দিক থেকে ন্যূনতম দশগুণ হয়ে থাকে। একইভাবে মেরাজের হাদীসে উল্লেখ আছে, আল্লাহ্ তা’লা
যখন বার বার অনুরোধের প্রেক্ষিতে পঞ্চাশ বেলার নামাযকে কমিয়ে পাঁচ বেলা করে দিলেন তখন তিনি বলেছিলেন,
فَقَالَ هِيَ خَمْسٌ وَهِىَ خَمْسُونَ،
অর্থাৎ ‘এই পাঁচই পঞ্চাশের সমান’(বুখারী: কিতাবুস সালাত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বুখারী শরীফ, ১ম খ-, পৃষ্ঠা-১৯৯, হাদীস নম্বর- ৩৪২)।
অর্থাৎ এগুলো বাহ্যিকভাবে যদিও পাঁচ বেলার নামায কিন্তু প্রভাব ও ফলাফলের দিক থেকে এগুলো পঞ্চাশ বেলার নামাযের সমান বিবেচিত হবে। অনুরূপভাবে, মির্যা সাহেব বলেছেন, আমার প্রকাশিত পাঁচ খ-ের ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ প্রভাব ও ফলাফলের দিক থেকে পঞ্চাশ খ-ের সমান বলে পরিগণিত হবে।
সুধী পাঠক, ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ গ্রন্থের পূর্ণ নাম হল, ‘আল বারাহীনে আহমদীয়া আলা হাক্কীয়্যতে কিতাবিল্লাহিল কুরআনে ওয়ান্ নবুওয়াতিল মুহাম্মদিয়াহ’। যার অর্থ হল: আল্লাহর পবিত্র বাণী আল-কুরআন ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর সত্যতার সপক্ষে উৎকৃষ্ট প্রমাণাদি ও অকাট্য যুক্তি। এই অর্থ ও শিরোনামটি মাথায় রেখে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে, হযরত মির্যা সাহেবের লিখিত সমস্ত গ্রন্থ ও রচনা এই উদ্দেশ্যেই নিবেদিত।
এবার বাকি রইল মানুষের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহের বিষয়টি। তারা কেবল ৫০খ- প্রকাশের জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহের কথা প্রচার করেছেন কিন্তু টাকা ফেরত নিয়ে নেয়ার জন্য হযরত মির্যা সাহেব যে প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, সে কথা তারা ঘুণাক্ষরেও উল্লেখ করেন নি এবং অনেকেই যে মির্যা সাহেবের কাছ থেকে তাদের টাকা ফেরত নিয়ে নিয়েছেন যার উল্লেখ ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ গ্রন্থে থাকলেও তারা তা উল্লেখ করেন নি! আসলে চর্বিত চর্বণ তুলে ধরলে যা হয় আর কি!
হযরত মসীহ্ মাওউদ(আ.) স্পষ্ট বলেছেন, ‘যারা (গ্রাহকবৃন্দ) ভবিষ্যতে নিজেদের টাকার কথা মনে করে এই অধমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য প্রস্তুত বা যাদের হৃদয়ে কুধারণার সৃষ্টি হতে পারে তারা দয়া করে স্বেচ্ছায় আমাকে পত্রযোগে অবগত করুন, আমি তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করব’ (তবলীগে রিসালাত, ৩য় খ-, পৃষ্ঠা-৩৫)।
এরপর বারাহীনে আহমদীয়ার ৫ম খ-ের ৭ পৃষ্ঠায় হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) বলেন, ‘যারা টাকা বা মূল্য দিয়েছিল তাদের অধিকাংশ একদিকে গালাগালিও করেছে আবার নিজেদের টাকা ফেরতও নিয়ে নিয়েছে।”
No comments:
Post a Comment